শহীদ মঈন হোসেন রাজু

স্বপ্ন আমার সাগর দোলার ছন্দ চায়, অশুভ’র সাথে আপোষহীন দ্বন্দ্ব চায়.…… ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্তরে যে ভাস্কর্য মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে, অন্যায় যত শক্তিশালী হোক না কেন, পরাজয় তার অবশ্যম্ভাবী; সত্য আর ন্যায়ের বিজয় অবশ্যম্ভাবী সে ভাস্কর্যটি রাজুকে ধারণ করে আছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী রাজু জানান দেবে, মৃত্যু তাঁকে কেড়ে নিতে পারলেও তাঁর শুভ্র আদর্শের মৃত্যু নেই, তাঁর গৌরবের নীল পতাকার বিনাশ নেই।

মৃত্যুঞ্জয়ী এ বীর সেনা জন্মেছিলেন ১৯৬৮ সালের ২৯ জুলাই । শেরেবাংলা নগরে ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে তোলার ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাথে তার যোগাযোগ। ছিলেন তেজগাঁও থানা কমিটির সদস্য। ৮৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে I স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র গণআন্দোলন তখন তুঙ্গে । জীবনবাজি রেখে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে যারা শিক্ষাঙ্গন, হাটে-মাঠে-ঘাটে তৎপর ছিলেন, রাজু ছিলেন তাদেরই একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মৃত্তিকা, অফুরন্ত সম্ভাবনা তাকে স্বপ্ন দেখায় । তাইতো সবুজ আঙ্গিনায় অস্ত্রের দাপট তিনি মেনে নিতে পারেননি।

ক্যাম্পাসে তখনো ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। এ সন্ত্রাসের বিপক্ষে ছাত্র ইউনিয়ন ছিল প্রতিবাদমুখর । সংগঠনের কাজকে তৃণমুলে ছড়িয়ে দিতে সদাকর্মব্যস্ত ছিলেন মেধাবী এ ছাত্রনেতা । দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থী এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মী, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার স্বপ্ন ধারণ করে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘প্রজ্ঞা’ । ‘৯১ সালে শহীদুল্লাহ হল কমিটি ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করেন । পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্যও হয়েছিলেন । মেধাবী এ সন্তানকে ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীর বুলেট ।

‘৯২ সালের ১৩ই মার্চ। টিএসসি জুড়ে চলছিল ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের গোলাগুলি । টিএসসির রেলিং-এ বসা রাজু তার পাশে থাকা কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে এ সন্ত্রাস-গোলাগুলির প্রতিবাদ করে ওঠে। ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শিক জোট গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের এ মিছিলেও গুলি চালায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা । গুলি মিছিলের সামনে থাকা রাজু’র কপাল ভেদ করে চলে যায়। রাজুর মৃত্যুর পর শামসুর রাহমান লিখলেন, ‘না রাজু, আমরা এভাবে তোমাকে ঘুমাতে দেব না.. ..’, ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলো গমগমিয়ে উঠল, ‘যে যুবক ঘৃণা করেনা রাজুর হিংস্র ঘাতকদের ‘সে অমানুষ’। রাজু হয়ে উঠল ইতিহাস। নীল পতাকার অভিযাত্রী রাজুর এ আত্মদান মহাকাল স্মরণ করবে। শহীদ মঈন হোসেন রাজু তোমার রক্তপতাকা হাতে আমরা চলি অবিরাম ।