আমাদের দাবি


১. শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হতে হবে যেন শিশু অবস্থাতেই ছাত্ররা সুস্থ জাতীয় ভাবধারা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পারে। নিজের দেশ ও দেশের গৌরবগাঁথার সঙ্গে পরিচিত এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চেতনা- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের আদর্শে শিক্ষিত হতে পারে।


২. শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ সাধন, ছাত্রদের মৌলিক জ্ঞান দান, সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, সততা-ন্যায়নিষ্ঠতা ও নিঃস্বার্থভাবে আত্মত্যাগের মানবিক গুণাবলীর উৎকর্ষ সাধন এবং শারীরিকভাবে যোগ্য করে তোলা। শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবশ্যই সমাজের সামগ্রিক চাহিদা ও পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।


৩ সমগ্র দেশে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জন্য একই ধরনের শিক্ষা চালু করতে হবে। দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষার ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হবে। সরকারি বৃত্তির সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক কারণে যাতে কারো লেখাপড়া বন্ধ না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাঠ্যবই, কাগজ-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ কম দামে ছাত্রদের হাতে পৌঁছাতে হবে। ছাত্র বেতন, পরীক্ষার ফিস ও নানাবিধ অযৌক্তিক ব্যয়ভার কমাতে হবে।


৪. প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের প্রতিটি মানুষকে পর্যায়ক্রমে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষিত করে তুলতে হবে।


৫. নির্দিষ্ট স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে ছাত্র-শিক্ষকদের কর্মপ্রচেষ্টা পরিচালিত করতে হবে। ছুটির সময় পুনর্বিন্যাস করে ছুটির সময়ে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।


৬. শিক্ষার সকল স্তরে পাঠ্যসূচি বিজ্ঞানসম্মত ও যুগোপযোগী করতে হবে।


৭. নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নারী সমাজের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।


৮. অনুৎপাদনশীল ও বিলাস খাতে ব্যয় কমিয়ে শিক্ষাখাতে ইউনেস্কো’র সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় আয়ের ৮% বরাদ্দ করতে হবে।


৯. কৃষি শিক্ষা, শ্রম শিক্ষা, প্রকৌশল শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে।


১০. শিক্ষকের সংখ্যা ছাত্র অনুপাতে বাড়াতে হবে।


১১. পরীক্ষা যাতে কেবল মুখস্থবিদ্যা অথবা নকলবিদ্যার পরিমাপ যন্ত্র না হয় সেভাবে পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একজন ছাত্রের মেধা ও জ্ঞানের গভীরতা পরিমাপ করতে হবে।


১২. দেশের সর্বত্র আরো অধিক সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস নির্মাণ করতে হবে। ছাত্রাবাসসমূহে সরকারি সাবসিডি দিতে হবে।


১৩. সকল ছাত্রের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিনামূল্যে চিকিৎসা, ব্যায়ামাগার ও খেলার মাঠ, ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।


১৪. শিল্প, ললিতকলা, নাট্যকলা, সঙ্গীত ও চারুশিল্পের বিকাশের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়াতে হবে।


১৫. সর্বস্তরে শিক্ষা হবে মাতৃভাষায়, পাশাপাশি একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশী ভাষায় লিখিত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো দ্রæত ও বিপুল পরিমাণে বাংলা ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করতে হবে।


১৬. বাঙালি ছাড়াও অপরাপর জাতিসত্তার মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে ও মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।


১৭. শিক্ষার কোনো একটি স্তরে প্রত্যেক ছাত্রের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।


১৮. পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে হবে।


১৯. মাধ্যমিক স্তর থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে নির্বাচিত সংসদ গঠনের সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, অভিভাবকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে ও সরকারি আমলা প্রশাসনের অযৌক্তিক ক্ষমতা খর্ব করতে হবে।


২০. মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, গাফিলতি, অকর্মণ্যতা ও দায়িত্বহীনতা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।


২১. উপর্যুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি সামনে রেখে একটি গণমুখী-বিজ্ঞানভিত্তিক-প্রগতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে, যাতে সকলের জন্য লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, শিক্ষার ব্যয় হ্রাস পায়, শিক্ষার দ্বারা দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং একটি গৌরবান্বিত জাতির সৃষ্টি হতে পারে।