শহীদ শাহাদাত হোসেন সারু
শহীদ শাহাদাত ১৯৬৪ সালের ২৭ জুন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ঘোষ কামতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মহব্বত আলী নৌবাহিনীর অফিসার । মা বেগম রোকেয়া। শাহাদাত ছোটবেলা থেকে বিনয়ী ও মেধাবী ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি ভাল ছবি আঁকতেন। তাঁর শখের মধ্যে ছিল বই পড়া, স্ট্যাম্প সংগ্রহ আর কবিতা আবৃত্তি করা । তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনী (চট্টগ্রাম) উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
১৯৮০ সালে বিদ্যালয়ের আলরাউন্ড বেস্ট পুরষ্কার পেয়ে বিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রের গৌরব অর্জন করেন। প্রতিবছর স্কুলের বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রায় পুরস্কার শাহাদাতের বাসায় জমা হতো। তিনি গান, কবিতা, ছবি আঁকা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে (১ম বিভাগে ৫টি লেটার মার্ক) উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ভর্তি হন । চট্টগ্রাম কলেজ ইসলামী ছাত্র শিবিরের দখলে থাকা সত্ত্বেও শাহাদাত কলেজ জীবনেই বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। তিনি কলেজের সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস শাখার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
১৯৮৪ সালের ২৭ মে দিবাগত রাত সোয়া ৪টা অর্থাৎ ২৮ মে স্বাধীনতা-বিরোধী চক্র ছাত্র শিবিরের কর্মী হারুনুর রশীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসের ১৫নং কক্ষে ১৭ বছরের শাহাদাতকে ঘুমন্ত অবস্থায় দা দিয়ে গলায় কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে । শাহাদাতের হত্যাকারী পালিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রদের হাতে ধরা পড়লে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে মেজিস্ট্রেটের নিকট হারুনুর রশিদ তার অপরাধ স্বীকার করে জানায় যে, সে রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে পূর্ব পরিকল্পতিভাবে হত্যাকাণ্ড চালায় এবং এতে সহযোগিতা করে তার সংগঠনের রাজনৈতিক নেতারা।
মৃত্যুর পরের দিন ছিল শাহাদাতের উচ্চ মাধ্যমিক ব্যবহারিক পরীক্ষার শেষ দিন। শহীদ শাহাদাতের স্বপ্ন ছিল শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার । ঘাতক চক্র চেয়েছিল। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তার স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিতে। বিস্তৃত স্বপ্নের বল্গাহীনতায় ভীত হয়ে তারা রাতের অন্ধকারে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়। ঘাতকেরা বরাবরের মত চোখে ঠুলি পরে ভুলে যেতে চেয়েছিল যে, শাহাদাত মৃত্যুবরণ করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শ মৃত্যুবরণ করবে না ।