শহীদ বিপ্রদাশ রায়
বিপ্রদাশ স্বপ্ন দেখতেন সমাজ বদলের সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের । চেয়েছিলেন দুঃখী মা বোনের মুখে হাসি ফোটাতে । তাই খুলনা জেলা সিপিবি’র সাথে এসেছিলেন ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারী পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র লাখো জনতার মহাসমাবেশ ।
চোখে মুখে স্বপ্নের ঝিলিক নিয়ে মিছিল করেছেন তপ্ত রোদ্দুরে কালো রাজপথে। ঘর্মাক্ত দেহে নিবিষ্ট মনে শুনছিলেন সমাবেশের বক্তৃতা । কিন্তু তার স্বপ্নকে রুদ্ধ করতে বিস্ফোরিত হয় কাপুরুষ ঘাতকদের রেখে যাওয়া বোমা । মূহুর্তেই হিমাংশু, মজিদ, হাশেমের মোক্তারের রক্তে লাল হয়ে যায় পল্টনের মাটি । আহত হন আরো অনেকে । বিপ্রদাশও মারাত্মকভাবে আহত হন । বোমার স্প্লিন্টার তাঁর বাম ফুসফুসের ওপরের অংশে আঘাত হানে। তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর রাতে স্থানান্তর করা হয় মহাখালির বক্ষব্যাধি হাসপাতালে । বিপ্রদাশ লিপ্ত হন মৃত্যুর সাথে লড়াইয়ে । ডাক্তাররা দ্রুত তাঁর ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করেন । কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি থেকে আবার তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে । শেষ পর্যন্ত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি হার মানেন মৃত্যুর কাছে । ২০ বছরের টগবগে তরুণ বিপ্রদাশ ছিলেন খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা, পড়তেন অর্থনীতির ১ম বর্ষে। তাঁর জন্ম বাগেরহাট জেলার মোংলার কাপালিরমেঠ গ্রামে তাঁর বাবার নাম নিরোদ বিহারী রায়, মাতার নাম সবিতা রায়। ১৯৯৭ সালে দিগরাজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থেকে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন।
১৯৯৯ সালে বাজুয়া এস এন কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ভর্তি হন বিএল কলেজের অর্থনীতি বিভাগে । যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে বিপ্রদাশ থাকতেন মিছিলের পুরোভাগে। হাসপাতালে আহত বিপ্রদাশ বলেছিলেন ‘আমি আবারো রাজপথে আসব, আমি মিছিলে আসব, আবার আসব।’ বিপ্রদাশের আর মিছিলে আসা হয়নি। কিন্তু বিপ্রদাশ জানেন ‘এক বিপ্র লোকান্তরে লক্ষ বিপ্র মিছিল করে।